সনাতন হিন্দু শাস্ত্র নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী পশু হিংসা করতে বলে না। যেমন দেখুন মনুসংহিতা ৫/৩৭, অকারণে পশুহনন (Animal Sacrifice In Yajna) করতে নিষেধ করছে।
কিন্তু প্রয়োজনবোধে শাস্ত্রীয় নিয়ম অনুসারে বিভিন্ন কাজে যেমন: যজ্ঞের জন্য, দেবকার্যের জন্য, পিতৃকার্যে পশুবধ করা যায় (মনু ৫/৩৯, ৫/৪৪)।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় যে কেবল উক্ত কাজের জন্য ছাড়া পশুকে মারতে নিষেধ করা হচ্ছে এবং বিনা যজ্ঞের জন্য পশু হত্যা নরকের দ্বার বলেও উল্লেখ করা হয়েছে (মনু ৫/০৩,৩৬,৩৭, ৪৮)। কেবল নিজের উদর পূর্তির জন্য কোনো পশুকে মারা চলবে না। কিন্তু যজ্ঞকর্মে পশুহিংসা করা যাবে, এজন্য বলা হয়েছে শ্রুতিবিহিত যে পশুহিংসা তাহাকে অহিংসা বলিতে হইবে (মনু ৫/৪৪)।
প্রশ্ন : বেদে পশুবলি আছে তো? (Animal Sacrifice In Yajna)
প্রশ্নটা মনু ৫/৪৪-এর উক্ত প্রমাণের দ্বারাই খণ্ডন হয়ে যায় ‘কারণ শ্রুতিতে পশুহিংসা আছে বিধায় তাকে অহিংসা বলা হয়েছে। এখন শ্রুতি অর্থাৎ বেদ থেকে দেখা যাক।
অধ্রিগো শমীধ্বং সুশমি শমীধ্বং শমীধ্বমধ্রিগবিতি
অনুবাদঃ হে পশুঘাতক! তোমরা পশুকে হনন কর; সুষ্ঠুভাবে অর্থ্যাৎ যথাশাস্ত্র হনন কর, হে অধ্রিগো- হনন কর।
মৈত্রা সং ৪/১৩/৪
অধ্রিগুকে(পশুঘাতককে) পশু আলম্ভনে(বধে) আদেশ করা হয়।এই প্রসঙ্গে নিরুক্ত ৫/১১/১১তে উক্ত মন্ত্রটি এসেছে,যেখানে প্রতিটা শব্দের অর্থ দেওয়া রয়েছে।

প্রশ্ন : মৈত্রায়ণী সংহিতাকে কি বেদ বলা যাবে? (Animal Sacrifice In Yajna)
এই প্রসঙ্গে নিরুক্ত থেকে দেখাতে চাই বিভিন্ন প্রসঙ্গে এই সংহিতার ‘মন্ত্রকে নিগম অর্থাৎ বেদ বলা হয়েছে। যেমন, নিরুক্ত ৫/৫/১৪ তে পশুবাচকত্বে মৈত্রায়ণী সংহিতা থেকে নিগম প্রদর্শিত হয়েছে। এছাড়াও নিরুক্ত ৫/১১/৮✔️৫/১৩/৫✔️৬/৮/১১ তে মৈত্রায়ণী সংহিতার মন্ত্রকে নিগম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব মৈত্রায়ণী সংহিতা বেদই হলো। বেদে পশু হনন করার প্রমাণও পাওয়া গেল।
বেদ থেকে আরেকটা প্রমাণ দেখাতে চাই। শুক্ল যজুর্বেদ মাধ্যন্দিন সংহিতা ২৯/৫৮-৫৯- এখানে কোন কোন দেবতার জন্য কোন কোন পশু- বিহিত তা বলা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে নিরুক্ত ১২/১০/৪ -এ উল্লেখ করা হয়েছে- অধোরামঃ সাবিত্র ইতি পশুসমান্নয়ে বিজ্ঞায়তে….
অর্থ্যাৎ- নিম্নপ্রদেশে কৃষ্ণবর্ণ ছাগপশু সবিতৃ দেবতার জন্য বিহিত, ইহা পশু সমান্নায়ে অর্থ্যাৎ কোন দেবতার জন্য কোন কোন পশু বিহিত ইহা যেখানে অভিহিত হইয়াছে তথায়(শুক্ল যজুঃ ২৯/৫৮,৫৯) পরিজ্ঞাত হওয়া যায়।এখানে নিরুক্ত অনুযায়ীও সিদ্ধ হলো যে নিম্নপ্রদেশে কৃষ্ণবর্ণ ছাগপশু সবিতৃদেবতার জন্য বিহিত। অতএব শাস্ত্রীয় পশুবলি বৈধই হলো।
রবি দেবনাথ