কুযুক্তি দিয়ে দয়ানন্দর ঋষিত্ব দাবীর হাস্যাস্পদ দাবির খণ্ডন

Date:

 

সনাতন ধর্মকে বিকৃত করে উপস্থাপন করার প্রচলন সুদীর্ঘ প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। তেমনি কোন মানুষের কিছু অনুসারী হলেই তাকে ভগবানের তুল্য করে তোলা সনাতন ধর্মালম্বীদের পুরাতন অভ্যাস।।

তেমনি এক ব্যক্তির নাম দয়ানন্দ স্বামী। তার নাম কে আরো মাহাত্ম্যপূর্ণ সনাতনীদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও মহান করে তোলার লক্ষ্যে মহর্ষি উপাধি দেয়া হয়েছে। আর আমাদের অন্য সিরিজে (দয়ানন্দস্বামীর ঋষিত্ব খণ্ডন)  প্রমাণ করেছি দয়ানন্দ ঋষি নন। যার ঋষি হবার যোগ্যতা নেই সে মহর্ষি হবে কি করে? মহর্ষি তো অনেক দূরের সাধনার ফল।

পাঠকগণ! কিছু উদ্ভট কুযুক্তি উপস্থাপন করে তাকে মহর্ষি হিসাবে সবার সামনে প্রদর্শন করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। কিছু মূর্খ মানবের শিশুদের মতো উচ্ছাস প্রকাশের মতো দাবী করেছে। পাঠকগণ! দেখে নিন এই কুযুক্তি গুলো কতটা হাস্যকর সুলভ ছিলো

 

 

কিছু কুযুক্তি উপস্থাপনকারী  সমাজী দয়ানন্দকে ঋষি উপাধিতে ভূষিত করার জন্যে। আচার্য্য উব্বট ও  মহিধর আচার্যের শুক্লযজুর্বেদ (৭/৪৬) মন্ত্রের ভাষ্য থেকে দাবী করেছেন

🔹আচার্য্য উব্বট তার শুক্লযজুর্বেদ (৭/৪৬) মন্ত্রএর ভাষ্যে লিখেছেন, “ঋষিমন্ত্রাণাম্ ব্যাখ্যাতা” অর্থাৎ ঋষি মন্ত্রের ব্যাখ্যাকর্তা।

🔹 একই মন্ত্রের ভাষ্য করতে গিয়ে আচার্য মহিধরও লিখেছেন,”ঋষিম্ মন্ত্রাণাম্ ব্যাখ্যাতারম্” অর্থাৎ ঋষিগণ মন্ত্রের ব্যাখ্যা করেন।

 

সনাতনীদের উওর :- দুর্জনতোষন্যায়ে ধরা যাক মন্ত্রের ব্যাখ্যাতা মানেই ঋষি। তাহলে সায়ণাচার্যর পূর্ববর্তী থেকে শুরু করে আজ অবধি যত বেদভাষ্যকার ছিলেন এবং আছেন; সবাইই ঋষি।

সমাজী: সায়ণাচার্য সহ এঁরা বেদের ভুল ব্যাখ্যা করেছেন, তাই তাঁরা ঋষি নন।

সনাতনী: আচ্ছা দুর্জনতোষন্যায়ে ধরে নিচ্ছি এঁরা ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। আর্যসমাজের পণ্ডিতরা নিশ্চয়ই ঠিক ব্যাখ্যা করেছেন। তাহলে দয়ানন্দ বাদে বাকি সমাজী ভাষ্যকারদের আপনারা ঋষি বলেন না কেন? এ থেকে প্রমাণিত হয় যে বেদের ব্যাখ্যা করলেই ঋষি, এটা আপনারা মানেন না। মানলে স্বীকার করুন যে দয়ানন্দর আগে ও পরেও বহু ঋষি হয়েছেন। অথবা বলে দিন যে দয়ানন্দ বাদে বাকি সমাজী ভাষ্যকাররা বেদের অপব্যাখ্যা করেছেন।

আপনাদের উভয়তঃ পাশারজ্জুতে বদ্ধ করা হল

[এবারে এই মন্ত্রের উবটাচার্য কৃত ভাষ্যর সঠিক অর্থ শুনুন। উবটাচার্য লিখেছেন যে ঋষিরা মন্ত্রের ব্যাখ্যা করেছেন। অর্থাৎ আগে ঋষি ও পরে মন্ত্রের ব্যাখ্যাকার। এমন নয় যে মন্ত্রর ব্যাখ্যা করে দিলেই তিনি ঋষি]

 

 

 

আবার নিরুক্ত (১৩/১২) শ্লোকে উল্লেখযোগ্য রয়েছে “তর্কই ঋষি”। তাই নিরুক্ত অনুযায়ী অপসংস্কৃতিরা দাবি করেছেন দয়ানন্দ ঋষি। 

 

সনাতনীদের উওর:- বাস্তবে যদি এমন হইত তাহলে যে কোন ব্যক্তি একজন আরেকজনের সাথে বেদ নিয়ে তর্ক করলে উভয়কেই ঋষি উপাধি দান করা হতো।

কোন বিধর্মী ব্যক্তি (মুসলিম, খৃষ্টান, বৌদ্ধ, ইহুদি) যদি বেদ অধ্যায়ন করে। ভুল ধরিবার প্রচেষ্টায় কোন বেদজ্ঞ ব্যক্তির সহিত তর্কে লিপ্ত হন তাহলে কি বিধর্মীকে ঋষি বলা উচিত??

আমাদের ধর্মে বিভিন্ন পণ্ডিতগনের জন্ম হয়েছে। বিভিন্ন পণ্ডিত ব্যক্তি বেদ নিয়ে একজন আরেকজনের সাথে তর্ক করে একজন আরেকজনের মতামত খন্ডন করেছেন। তাই বলে কি তাদের ঋষি বলা উচিত??

বর্তমানে স্বশরীরে উপস্থিত আর্যসমাজের অনেক পণ্ডিত রয়েছেন। এই সকল ব্যক্তি বর্গরা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে তর্ক বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন। কেহ বিজয় হয়েছেন, কেহবা হেরেছেন।  তাহলে এইসকল ব্যক্তিদের কেন মহর্ষি বলে উল্লেখ করেন না। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, বেদ নিয়ে তর্ক করলেই যে ঋষি, এটা আপনারাও মানেন না। মানলে স্বীকার করুন যে দয়ানন্দর আগে  পরেও বহু ঋষি হয়েছেন। আপনাদের মন কল্পিত দাবী অনুযায়ী তর্ক করলেই যদি ঋষি ভূষণে ভূষিত হোন। তাহলে স্বীকার করুন বিধর্মীরাও ঋষি। আর বিধর্মীদের ঋষি স্বীকারোক্তি না দেন। তাহলে এটা স্বীকার করুন দয়ানন্দ ঋষি নন। 

পুনরায় সমাজীদের পাশারজ্জুতে বদ্ধ করা হল

 

 

 

আবার বৌধায়ন গৃহ্যসূত্র (১/৭/৭) এ বলা হয়েছে, “চতুর্বেদা ঋষি” অর্থাৎ যিনি চতুর্বেদ অধ্যয়ন করেছেন তিনি ঋষি।

আমরা সকলে জানি বেদ কোন একটা ছোট বই না।চতুর্বেদের অনেক শাখা-প্রশাখা এবং লক্ষাধিক মন্ত্র আছে। যা একজন মানুষের সাধারণ মানুষের পক্ষে পাঠ করা প্রায় অসাধ্য। যদি না সে আধ্যাত্মিকতার সাথে পরিচয় লাভ করে।

কিন্তু আমরা দয়ানন্দের নিজের কথা থেকে জানতে পারি তিনি এই বিশাল গ্রন্থাগার সম্পূর্ণরূপে অধ্যায়ন করেননি। তাই বলা যায় তিনি ঋষি নন। তার অনুসারীরা যতই তাকে ঋষি বানানোর জন্য ভন্ডামি করুক তা কখনোই শাস্ত্র অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য হবে না।

 

 

 

এর সাথে সংযুক্ত করিতেছি যে স্বামী বিবেকানন্দের কথায়,

“যারা আধ্যাত্মিকতার সাথে পরিচয় লাভ করেছে সেই সকল বেদজ্ঞ কে ঋষি বলা যেতে পারে”।

তবে সেটা স্বামী বিবেকানন্দের কথা কোন শাস্ত্রের কথা না। যেহেতু দয়ানন্দ সরস্বতী আধ্যাত্মিকতার সাথে পরিচয় লাভ করতে পারেন নি তাই তার নামের পূর্বে ঋষি উপাধি লাগানো মূর্খের প্রলাপ ছাড়া আর কিছু নয়।

অনেকে অরবিন্দ বা বঙ্কিমচন্দ্রকে ঋষি বলে থাকে। এইটা তাদের অনুসারীদের কার্যক্রম ছাড়া আর কিছুই না। শাস্ত্র অনুযায়ী বাস্তবিক ভাবে অরবিন্দ বা বঙ্কিমচন্দ্র ঋষি হবার পথে ধাবিত হয়েছিলেন মাত্র। সম্পূর্ণরূপে ঋষি হওয়ার যোগ্যতা তাদের কখনোই ছিল না। তাই কারো অনুসারীর বক্তব্য অনুযায়ী তাকে ঋষি উপাধি দিলে সেটা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

পুরুষার্থচতুষ্টয় – জগদ্গুরু শঙ্করাচার্য স্বামিশ্রী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী মহাভাগ

'ধর্মার্থকামমোক্ষাখ্যং পুরুষার্থচতুষ্টয়ম্' — ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ হল...

গুলঞ্চের উপকারিতা ও ব্যবহার

গুলঞ্চ আয়ুর্বেদে এক পরিচিত গুল্ম, এটা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে...

Pixar Brings it’s Animated Movies to Life with Studio Music

Find people with high expectations and a low tolerance...

Concert Shows Will Stream on Netflix, Amazon and Hulu this Year

Find people with high expectations and a low tolerance...
error: টোকাটুকি দণ্ডনীয় অপরাধ